টাকা দিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন খতম করানো জায়েজ?

 



মৃত্যুর পরে বান্দার আমল বন্ধ হয়ে যায়। দুনিয়া থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ থাকে না। তবে তিনটি কাজ এমন আছে যার কারণে বান্দা মৃত্যুর পরেও কবরে থেকে সওয়াব পেতে থাকেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, যখন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার আমলের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল বন্ধ হয় না। ১. সদকায়ে জারিয়া ২. এমন ইলম যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয় ৩. নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (সহিহ মুসলিম: ৪০৭৭; সুনানে আবু দাউদ: ২৮৭০)


তবে আমাদের সমাজে লোকজন অধিকাংশ সময় হুজুরদেরকে খতম পড়ার জন্য দাওয়াত করে আনে, খতম করার পর তাদেরকে খাওয়ায় এবং টাকা পয়সাও দেয়। এমন করা কি জায়েজ?


উত্তর: প্রচলিত খতমে কুরআন পাঠকারীদের খাবার খাওয়ানো এবং টাকা পয়সা দেওয়া বিদআত ও নাজায়েজ। এভাবে কুরআন তেলাওয়াত করার দ্বারা না পাঠকারী কোনো সওয়াব পায় আর না মৃতব্যক্তিরা। 


ফাতাওয়া শামীতে রয়েছে- অর্থ: তাজুশ শরিয়াহ হেদায়াতে লিখেন, বিনিময় নিয়ে কুরআন পড়ার দ্বারা কোনো সওয়াবই হয় না। না মৃতব্যক্তি সওয়াব পায়, আর না তেলাওয়াতকারী। 


আল্লামা আইনী হেদায়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থে লেখেন, দুনিয়া তলব করার কারণে তেলাওয়াতকারীকে এমন তেলাওয়াত থেকে বারণ করা হবে। এভাবে তেলাওয়াত করার বিনিময় দেওয়া হলে গ্রহীতা ও দাতা উভয়ে গুনাহগার হবে। 


মোটকথা, আমাদের সমাজে বিনিময় গ্রহণ করে কুরআন তেলাওয়াত করার যে রেওয়াজ চালু হয়েছে তা জায়েজ নয়। কারণ, এর মধ্যে খতমের আয়োজনকারী বা তার আত্মীয়ের জন্য সওয়াব পাঠানো উদ্দেশ্য হয় এবং তেলাওয়াতকারী তেলাওয়াত করে টাকার জন্য। 


টাকার জন্য তেলাওয়াত করায় তেলাওয়াতকারী নিজে কোনো সওয়াব না পেলে ভাড়া গ্রহণকারীকে সওয়াব দেবে কোত্থেকে? 


বর্তমান সময়ে কুরআন তেলাওয়াত করার বিনিময় না দিলে সাধারণত কেউ তেলাওয়াত করবে না। কুরআনকে তারা উপার্জন এবং দুনিয়া কামানোর মাধ্যম বানিয়ে ফেলেছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।  ইন্নালিল্লাহ। (ফাতাওয়া শামী ৬/৫৬) দারুল উলুম দেওবন্দ, ফতোয়া নং: ১৮৩৬০১


এ প্রসঙ্গে ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, মৃত ব্যক্তির ঈসালে সওয়াবের জন্য কোরআন খতম বা যেকোনো খতম পড়ে অথবা দোয়া করে কোনো প্রকার বিনিময়/হাদিয়া দেওয়া-নেওয়া জায়েজ নেই। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৫৬; ফতোয়া তাতারখানিয়া: ২০/৫৩; ফাতহুল বারি: ৮/৭১৯; ইমদাদুল ফতোয়া: ৩/৩৩৪; ইমদাদুল আহকাম: ১/২১২; কিফায়াতুল মুফতি ২/৪১)


অবশ্য দুনিয়াবি উপকার যেমন রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করা, বিপদ-আপদ দূর হওয়া বা ঘরে বরকতের জন্য কোনো সুরা তেলাওয়াত করে বা কোরআন খতম করে বিনিময় নেওয়ার অবকাশ আছে। (দ্র: সহিহ বুখারি: ৫৭৩৭; শরহু মাআনিল আছার: ২/২৪৬; উমদাতুল কারি: ১২/৯৫, ২১/২৬৪; শিফাউল আলিল, পৃষ্ঠা-১৫৭)


কিন্তু এ কাজকেও পেশা বানানো সমীচীন নয়। (ফাতহুল বারি: ১১/৯৭)


মৃতের আত্মায় সওয়াব পৌঁছানো বা তার উপকারে আসার সুন্নত দুটি পদ্ধতি হলো মৃতের জন্য দোয়া করা এবং সদকা করা। নবীজি (সা.) ও সাহাবিদের থেকে বহু সূত্রে মৃতের জন্য এ দুটি আমলের কথা বর্ণিত রয়েছে।


Countdown Timer
00:01

Comments

Popular posts from this blog

দেশে আবারও করোনায় মৃত্যু, শনাক্ত ৩

ঢাকায় আ.লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

১২শ বস্তা চাল উদ্ধার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফের বক্তব্য