হিটলার কেন গোঁফের আদল বদলে ফেলেন
জার্মানির হামবুর্গ থেকে প্রকাশিত বহুল পরিচিত সাপ্তাহিক স্ট্যান পত্রিকাটি সম্প্রতি ‘অ্যাডলফ হিটলারের বিস্ময়কর গোঁফ’ শীর্ষক একটি লেখা প্রকাশ করেছে। শুধু এবারই নয়, এর আগেও বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ প্রকাশিত লেখার প্রতিপাদ্য—হিটলার এমন গোঁফ রাখার তরিকা কোথায় পেয়েছিলেন!
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের সহযোদ্ধাদের একজন ছিলেন আলেকজান্ডার মরিটজ ফ্রে। তিনি হিটলারের সঙ্গে ব্যাভেরিয়ান সেনাবাহিনীতে একই রেজিমেন্টে কাজ করতেন। পরে মরিটজ ফ্রে রণাঙ্গনের স্মৃতিচারণা করে বলেছেন, ১৯১৫ সালের ২২ এপ্রিল শরৎকালের এক সন্ধ্যায় বেলজিয়ামের ইপ্রেন রণাঙ্গনে জার্মান সেনাবাহিনী শত্রুপক্ষের ওপর ইতিহাসে প্রথমবার ‘গ্যাস গ্রেনেড’ ব্যবহার করে হামলা শুরু করে। কিন্তু বাতাসের প্রবাহ হঠাৎ উল্টো দিকে ঘুরে যায়। এর ফলে হিটলার বিষাক্ত গ্যাসে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে পরিখায় নেমে আসেন।
সেখানে আগে থেকে অবস্থান করা মরিটজ ফ্রে দেখতে পান, হিটলারের মুখাবয়ব কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। তাঁর চোখে–মুখে আতঙ্ক আর ক্রোধের মিশেল। মুখে লালচে আভা। এমনভাবে ফুলেছে, যেন এইমাত্র তিনি একটি মুরগির মাংস গিলে খেয়েছেন। গ্যাসের বিষক্রিয়ায় জেরে হিটলারকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও জানান তাঁর এই সহযোদ্ধা।
আহত হওয়ার আগপর্যন্ত হিটলারের গোঁফ ছিল লম্বাটে, প্যাঁচানো। কিন্তু রণাঙ্গনে নতুন গ্যাস মাস্ক পরার বিধান চালু হলে গোঁফের সেই আদল বদলে ফেলেন তিনি।
জার্মানির অনেক গবেষক তাঁদের নানা বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন, হিটলার কীভাবে ছোট আকারের গোঁফ রাখার দিকে ঝুঁকলেন। গবেষকেরা বলেছেন, চেহারার বাহ্যিক আদল তাঁকে একটি ‘ব্র্যান্ডে’ পরিণত করতে পারে ভেবেই হিটলার সেদিকেই ঝুঁকেছিলেন।
হিটলার কেতাদুরস্ত ফ্যাশন মেনে চলতেন না। তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর স্বৈরশাসক এবং ঠান্ডা মাথায় নানা জাতিসত্তা ও বিরোধী রাজনীতির মানুষদের নিধন করার পুরোধা ব্যক্তি। হালফ্যাশন নিয়ে সচেতন না হলেও আচরণে নিজেকে বড় নেতা সাজাতে ওস্তাদ ছিলেন তিনি। জনতাকে তাতিয়ে তোলায় তিনি বিশেষ পারঙ্গম ছিলেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপীয়দের মধ্যে লম্বাটে আর প্যাঁচানো ঊর্ধ্বমুখী গোঁফকে সত্যিকারের পুরুষালি অনুষঙ্গ বিবেচনা করা হতো। তাই গোঁফের আদল ধরে রাখতে ও দৃষ্টিনন্দন করতে ওই সময়ে ইউরোপের অভিজাত পুরুষেরা রাতের বেলায় একটি বিশেষ ধরনের মুখোশ পরতেন।
ফরাসি ঔপন্যাসিক গি দ্য মোপাসাঁর বহুল পঠিত উপন্যাস বেল আমি। এ উপন্যাসে তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে প্যারিসের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের পটভূমিতে গোঁফের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন।
জার্মানিতে হিটলারের নতুন আদলের গোঁফকে ‘টুথব্রাশ গোঁফ’ কিংবা ‘দুই আঙুলের গোঁফ’ নামেও ডাকেন অনেকে। এটি একটি নির্দিষ্ট গোঁফের স্টাইল, যা নাকের নিচে এর সরু ও বর্গাকার আকৃতির জন্য পরিচিত।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, হিটলার তাঁর বন্ধু ও জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ আর্নস্ট হ্যানফস্টাইনগলের প্রভাবে স্বস্তিকার মতো প্রতীকের প্রতি আকর্ষিত হন। সেই সঙ্গে গোঁফের আদল বদলানোর সময় এলে তিনি বিশ্বযুদ্ধের করপোরালদের গোঁফের ধাঁচ বেছে নেন।
যদিও ওই সময় হিটলারের গোঁফের মতো ফ্যাশন খুব একটা প্রচলিত ছিল না। ১৯২০-এর দশকে হিটলার সাধারণ স্যুট পরতেন। পরে একটি ট্রেঞ্চ কোটের (লম্বা সামরিক ধাঁচের কোট) সঙ্গে তা পরতেন। কখনো পরতেন লম্বা ওভারকোট।
১৯৩৩ সালের ৩০ জানুয়ারি অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হন। তাঁর হাত ধরেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী ও বিভীষিকাময় তাণ্ডব।
Comments
Post a Comment