শিশুর মধ্যে যেসব আচরণগত সমস্যা থাকলে সতর্ক হওয়া উচিত
সন্তানকে বড় করতে গিয়ে সবসময়ই কোনো না কোনো চ্যালেঞ্জ সামনে আসে। বিশেষ করে যখন সন্তানের মধ্যে অবাধ্যতা, জেদ, আগ্রাসন ও মনোযোগের অভাবের মতো আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়। আর মা-বাবাকে এই আচরণগুলো মোকাবেলা করতে হয়।
অন্য সবকিছুর মতো প্রতিটি শিশু স্বতন্ত্রভাবে আচরণ করে।
তবুও গবেষণা দেখায় যে কিছু নির্দিষ্ট প্যারেন্টিং শৈলী আচরণ ও মানসিক সুস্থতা সংশোধনে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। আজকের প্রতিবেদনে তিনটি প্যারেন্টিং পদ্ধতির বিষয়ে আলোচনা করব, যা সত্যিই আচরণগত সমস্যাযুক্ত শিশুদের সাহায্য করে।
শিশুদের জন্য কার্যকরী প্যারেন্টিং শৈলী
অথরিটেটিভ প্যারেন্টিং : স্নেহ ও শৃঙ্খলার ভারসাম্য
আচরণগত সমস্যা মোকাবেলার জন্য অথরিটেটিভ শৈলীকে প্রায়শই একটি কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে কঠোর সীমা নির্ধারণ করা হয় এবং একই সঙ্গে সহানুভূতি ও খোলামেলা যোগাযোগের ব্যবহার করা হয়।
কঠোর শাস্তি ও কান্নাকাটির পরিবর্তে মা-বাবারা তাদের নিয়মের কারণগুলো ব্যাখ্যা করেন এবং তাদের সন্তানদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পথ দেখান।
উদাহরণস্বরূপ, যখন একটি শিশু জেদ করে, তখন একজন অথরিটেটিভ অভিভাবক স্বীকার করেন, ‘আমি বুঝতে পারছি তুমি বিরক্ত,’ কিন্তু জেদের আচরণের ওপর সীমা নির্ধারণ করে বলেন, ‘আমরা তোমাকে মারব না বা চিৎকার-চেঁচামেচি করব না। কী সমস্যা হয়েছে, আমাদের বলো।” এই ভারসাম্য বিশ্বাস তৈরি করে এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও সম্মান শেখায়।
বছরের পর বছর ধরে এটি শিশুর অবাধ্যতা কমাতে এবং সহযোগিতা বাড়াতে কাজ করেছে।
পজিটিভ প্যারেন্টিং : শাস্তির চেয়ে উৎসাহ প্রদান
পজিটিভ প্যারেন্টিং খারাপ আচরণের ওপর জোর না দিয়ে ভালো আচরণকে গুরুত্ব দেয়। অনেক শিশুর মধ্যে মনোযোগ আকর্ষণ করাটা আচরণগত সমস্যার একটি প্রধান লক্ষণ। তাই, নেতিবাচক আচরণ কখনো কখনো তাদের মনোযোগ পাওয়ার একটি উপায় হতে পারে। চেষ্টার জন্য প্রশংসা, ছোট সাফল্য উদযাপন এবং সঠিক আচরণের জন্য পুরস্কৃত করা সেই মনোযোগ আকর্ষণকে সঠিক দিকে চালিত করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যে শিশু হোমওয়ার্কের সময় বেশিক্ষণ স্থির হয়ে বসতে পারে না, তাকে অল্প সময়ের জন্য মনোযোগ দেওয়ার জন্য মৌখিক প্রশংসা বা ছোটখাটো সুবিধা দিয়ে পুরস্কৃত করা যেতে পারে। এটি তার আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেবে এবং তাকে ভালো আচরণের সঙ্গে ভালো পরিণতির সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করবে। যার ফলে ধীরে ধীরে বিরক্তিকর আচরণ কমে যাবে।
থেরাপিউটিক প্যারেন্টিং : শান্ত, ধারাবাহিক ও ট্রমা-সচেতন
কিছুক্ষেত্রে যে শিশুরা ঘন ঘন আচরণগত সমস্যা দেখায়, তারা তাদের অতীতের অমীমাংসিত মানসিক সমস্যা, মানসিক চাপ বা ট্রমার কারণে এমনটা করে। থেরাপিউটিক প্যারেন্টিং সাধারণত পালক বা দত্তক মা-বাবারা প্রয়োগ করেন। শান্ত ধারাবাহিকতা, ধৈর্য ও শক্তিশালী মানসিক সুরক্ষার ওপর জোর দেয়। এই পদ্ধতির অভিভাবকরা সংঘাতমূলক শৃঙ্খলা এড়িয়ে চলেন এবং সংযোগ, আশ্বাস ও স্পষ্ট রুটিনের গুরুত্ব দেন।
উদাহরণস্বরূপ, শিশুর আচরণে বিরক্ত হয়ে রেগে যাওয়ার পরিবর্তে একজন থেরাপিউটিক অভিভাবক শান্ত থাকেন, সীমা নির্ধারণ করেন এবং পরে শিশুকে ভাবতে সাহায্য করেন যে কোন জিনিসটি তাকে এই আচরণের জন্য প্ররোচিত করেছে। এই প্রক্রিয়াটি পরিস্থিতি খারাপ হওয়া থেকে আটকায় এবং শিশুদের একটি যত্নশীল পরিবেশে তাদের আবেগ পরিচালনা করতে শেখায়।
Comments
Post a Comment