ঘুমের যেসব অভ্যাস নীরবে আপনার ক্ষতি করছে

 



দিনের ক্লান্তি কাটাতে আমরা প্রত্যেকে ঘুমের ওপর নির্ভর করি। তবে শুধু ঘুমালেই হলো না, ঘুম হতে হবে নিয়মমাফিক ও স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আধুনিক জীবনযাত্রার চাপে অনেকের ঘুমের ধরন এলোমেলো হয়ে গেছে। রাত জেগে কাজ বা মোবাইল ব্যবহার, দিনে একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার অভ্যাস, আবার কেউ সপ্তাহের পাঁচ দিন কম ঘুমিয়ে ছুটির দিনে একটানা শুয়ে থেকে সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে চান। কারও আবার দীর্ঘদিন ধরে ইনসমনিয়ার সমস্যা চলে আসছে। এসব অভ্যাস আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিকর মনে না হলেও দীর্ঘমেয়াদে শরীর ও মনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।



যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, মানুষের ঘুমের চারটি ভিন্ন ধরন রয়েছে। আর প্রতিটি ধরন দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ওপর ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে। গবেষণাটি প্রকাশ হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল সাইকোসোমাটিক মেডিসিন-এ। প্রায় ৩ হাজার ৭০০ জন মানুষের ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা ঘুমের চারটি ধরন চিহ্নিত করেন—

১. ভালো স্লিপারস : যাদের ঘুমের অভ্যাস স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর।



২. ন্যাপারস : যারা রাতে ভালো ঘুমালেও দিনের বেলা নিয়মিত ঝিমুনি দেন বা একটু ঘুমিয়ে নেন।

৩. উইকেন্ড ক্যাচ-আপ স্লিপারস : যারা সপ্তাহের দিনে কম ঘুমিয়ে ছুটির দিনে বেশি ঘুমিয়ে ঘাটতি পূরণ করেন।



৪. ইনসমনিয়া স্লিপারস : যাদের ঘুমের সমস্যা আছে—ঘুম আসতে দেরি হয়, কম সময় ঘুম হয় এবং দিনে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভূত হয়।



গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি মানুষই ন্যাপারস ও ইনসমনিয়া স্লিপারস ক্যাটাগরিতে পড়েছেন।



ইনসমনিয়া আক্রান্তদের ঝুঁকি বেশি



গবেষণার ফলে দেখা যায়, যারা ইনসমনিয়ায় ভোগেন, তাদের মধ্যে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও বিষণ্নতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। গবেষণা দলের প্রধান ডা. সুমি লি বলেন, ‘যাদের দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাদের পক্ষে আবার স্বাভাবিক ঘুমের ছন্দে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু যদি দৈনন্দিন জীবনে ঘুমের মান উন্নত করা যায়, তাহলে এর প্রভাব সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত ইতিবাচক হবে।’



চিকিৎসকদের মতে, রোগীর ঘুমের ধরন ভালোভাবে বুঝতে পারলে লক্ষ্যভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া সহজ হবে। বিশেষ করে ইনসমনিয়া আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। অন্যদিকে, দিনের বেলা নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ, যাদের রাতে মোটামুটি ভালো ঘুম হয়, কিন্তু তারপরও দিনে ন্যাপ নেওয়ার অভ্যাস আছে, তাদের মধ্যেও দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের ক্রনিক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।



ঘুম মানেই শুধু বিশ্রাম নয়



বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুম শুধু বিশ্রামের সময় নয়; বরং শরীর ও মস্তিষ্কের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য ধাপ। তাই ঘুমের মান ও ঘুমের ধরন—দুটোর প্রতিই সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। নিয়মিত ও সুষম ঘুম অভ্যাস গড়ে তুললে ভবিষ্যতে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, মানসিক অবসাদসহ নানা দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

Countdown Timer
00:01

Comments

Popular posts from this blog

দেশে আবারও করোনায় মৃত্যু, শনাক্ত ৩

১২শ বস্তা চাল উদ্ধার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফের বক্তব্য

ঢাকায় আ.লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩