বান্দরবানে কেএনএফের ঘাঁটিতে মিয়ানমারের অত্যাধুনিক অস্ত্র
জোরপূর্বক বাড়ি থেকে কিশোর-তরুণদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর উঁচু পাহাড়ের ওপর গহীন জঙ্গলে ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশ নিতে বাধ্য করা হয় তাদের। শুরু হয় শারীরিক কসরত। কমব্যাট ট্রেনিং নিতে হয়। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের কৌশল রপ্ত করে তারা। উঁচু পাহাড়ের ওপর ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে কখনো কখনো গুলির শব্দ পাওয়া যায়। দুই পাহাড়ের ভাঁজে বসবাস করা পাহাড়ি-বাঙালিরা বুঝতে পারে যে, ওখানে ট্রেনিং হচ্ছে। এভাবেই ট্রেনিং সম্পন্ন করার পর তারা পরিধান করে জলপাই রঙের অ্যাম্বুস প্রকৃতির ছাপা শার্ট-প্যান্ট, ক্যাপ ও জ্যাকেট। পায়ে থাকে বুট জুতা। তাদেরকে সেনাবাহিনীর আদলে পদবি দেওয়া হয় ক্যাপ্টেন, মেজর, লেফট্যানেন্ট কর্নেল এবং কর্নেল। ট্রেনিং নেওয়া এই দলটির প্রধানের পদবি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। এটি বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকা রুমা থানা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের ওপরে। এই ট্রেনিং ক্যাম্পটি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সামরিক শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মিদের (কেএনএ)।
পাইন্দু ইউনিয়নের পলতাই পাহাড়ের পাদদেশে কুকি জনগোষ্ঠীর পলি প্রাংসা ও মুয়ালপি নামে দুইটি পাড়া রয়েছে। এই দুই পাড়ার মধ্যবর্তী স্থানে কুত্তাঝিরি নামক স্থানে গত ২ জুলাই সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে দুই জন কেএনএ-এর সদস্য নিহত হন। কুত্তাঝিরি থেকে দুইটি একে-৪৭ রাইফেল (স্টিলবাট ভার্সন), একটি চাইনিজ রাইফেল, বিপুল পরিমাণ চাইনিজ রাইফেলের গুলি, স্নাইপারের গুলি, কার্তুজ, পয়েন্ট টুটু রাইফেলের গুলি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা একটি চাইনিজ রাইফেল পুলিশের।
গত বছরের ২ এপ্রিল রুমায় সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির সময় ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের দুটি এসএমজি, আটটি চায়নিজ রাইফেল এবং আনসারের চারটি শটগান ছিনিয়ে নেয় কেএনএফ। লুট হওয়া অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে একটি এসএমজি ও একটি চাইনিজ রাইফেল উদ্ধার করতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কুত্তাঝিরি থেকে উদ্ধার হওয়া চাইনিজ রাইফেলটি সোনালী ব্যাংকে কেএনএফের ডাকাতির সময় লুট হয়েছিল।
অন্যদিকে, উদ্ধার হওয়া একে-৪৭ রাইফেল স্টিলবার্ট ভার্সনের দুইটি অস্ত্র নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। এই দুইটি অস্ত্র মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর ব্যবহৃত। অস্ত্রের ম্যাগাজিন ফাইবারের তৈরি। নতুন ভার্সনের এই ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাংলাদেশের কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে শুরু হয়নি। কেএনএফের ঘাঁটি থেকে স্নাইপার রাইফেলের গুলি যেসব উদ্ধার করা হয়েছে—সেগুলোও সামরিক জান্তার ব্যবহৃত।
Comments
Post a Comment