রাজনীতিতে উত্তাপ, আজ যমুনায় জরুরি বৈঠক
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান মতভিন্নতার মধ্যেই হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ রোববার বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার রাতে জাতীয় পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষকে ঘিরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের লাঠিপেটায় নুরুল হকের আহত হওয়ার ঘটনায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। অন্তর্বর্তী সরকারসহ দেশের প্রায় সব দল এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের এক সভায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, আজ বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। দল তিনটির সঙ্গে বৈঠক হবে আলাদাভাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের ডেকেছেন। বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে হয়তো আলাপ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘ওনারা তিনটার সময় ডেকেছেন। ওই সময় আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা আছে। এটা পূর্বনির্ধারিত। হয়তো আমরা সময়টা অ্যাডজাস্ট করার জন্য অনুরোধ করব।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিকেল সাড়ে চারটায় ও এনসিপির সঙ্গে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বৈঠকের জন্য তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণের বার্তায় বলা হয়েছে, বৈঠকে সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। এনসিপির সঙ্গে সন্ধ্যা ছয়টায় বসবেন প্রধান উপদেষ্টা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে আভাস পাওয়া গেছে যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর বিবেচনায় জাতীয় পার্টির (জাপা) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে।
এ ছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সরকারের কোর কমিটির বৈঠকও রয়েছে।
এদিকে নুরুল হকের দল গণ অধিকার পরিষদ গতকাল বিকেলে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয় পার্টিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান গতকাল ঝিনাইদহে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, জাতীয় পার্টি ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মানুষের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছে। তারা জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করে নিজেদের পুরোনো ইতিহাস উন্মোচন করেছে। তাই দলটিকে নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে, সেটির আইনগত দিক যাচাই-বাছাই করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে আমাদের ফোন করে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আলোচনার বিষয়বস্তু কী, আলোচনার পর জানাব।’
হঠাৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় আগামী নির্বাচন ঘোষিত সময়ের মধ্যে হবে কি না, এ নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে ও নাগরিক সমাজে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
Comments
Post a Comment